
নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রামমালা গ্রন্থাগারে (রামমালা লাইব্রেরি) সংরক্ষিত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি, প্রাচীন বই, সংবাদপত্র এবং ঐতিহাসিক নথিপত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালা প্রাঙ্গণে অবস্থিত এই গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানভাণ্ডারটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই ঘোষণা দেন।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “রামমালা গ্রন্থাগার দেশের সংস্কৃতি ও মননচর্চার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। একটি ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে এর মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণ জরুরি।”
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “রামমালা গ্রন্থাগারে যে সব পাণ্ডুলিপি, বই ও দলিল রয়েছে, সেগুলো আমাদের জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অমূল্য সাক্ষ্য। এগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগেই ডিজিটাল আর্কাইভ ও আধুনিক সংরক্ষণব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করা হবে, যাতে দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।”
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, “গ্রন্থাগারের সঙ্গে থাকা ছোট মিউজিয়ামে অতি প্রাচীন মুদ্রা, শিল্পকর্ম ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এগুলো সুরক্ষায় বৈজ্ঞানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি ও প্রদর্শনের আধুনিক ব্যবস্থা চালু করা উচিত।”
এর আগে, তথ্য উপদেষ্টা কুমিল্লা নগরের জাগুরঝুলি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রকল্পের অগ্রগতি, সম্ভাব্য নকশা ও বাস্তবায়ন সময়সূচি সম্পর্কে তথ্য নেন।
তিনি বলেন, “তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন” এই কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হলে সাধারণ মানুষের সেবা গ্রহণ সহজ হবে এবং কুমিল্লা অঞ্চলের তথ্যভিত্তিক উদ্যোগ ও কার্যক্রমে গতি বাড়বে।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, কুমিল্লার রামমালা গ্রন্থাগার বাংলাদেশের তৃতীয় অথবা চতুর্থ পান্ডুলিপি পুঁথি সংরক্ষণাগার।এখানে মোটামসুটি ভালো সংগ্রহ রয়েছে কিন্তু এটির পরিস্থিতি খুবই খারাপ, নষ্ট হওয়ার মত অবস্থা। আশা করি সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় কুমিল্লার এ গ্রন্থাগারসহ দেশের প্রাচীন লাইব্রেরীগুলোকে ডিজিটাইলেজেশন স্কেন করে সংরক্ষণ করবে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের ঈশ্বর পাঠশালা মহেশাঙ্গনে রামমালা গ্রন্থাগার পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, যতদূর জানি কুমিল্লার এ রামমালা পাঠাগার বাংলাদেশের তৃতীয় অথবা চতুর্থ পান্ডুলিপি পুঁথি সংরক্ষণাগার। এটি বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পর সবচেয়ে বেশি প্রাচীন পুঁথি পান্ডুলিপি সংগ্রহীত রয়েছে এখানে। কুমিল্লার মহেশাঙ্গনের শতবর্ষী রামমালা গ্রন্থাগারে এসে দেখলাম এখানে সংরক্ষণের অভাবে অনেক পুঁথি-পত্রই নষ্ট হচ্ছে। এখানে যেসব তাল পাতার পুঁথিসহ অন্যান্য প্রাচীন বই পত্র আছে সেগুলোকে ডিজিটাইলেজেশন করে সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। ডিজিটাইলেজেশন হয়ে গেলে এই পুঁথির একটি কপি আমাদের কাছে সংগ্রহীত থাকবে। এ ব্যাপারে আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। পরবর্তীতে যদি সম্ভব হয় তো আমরা তাহলে আমরা এটি আলাদা ভবনের সংরক্ষণ করা যায় কিনা সেটি চিন্তাভাবনা করব। আশা করছি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটি স্ক্যান করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিবে। তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, এসব পাণ্ডুলিপি পুথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক মূল্য সম্পন্ন। তাই এগুলোকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । রামমালা গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, এই গ্রন্থাগারে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি পুঁথি পান্ডুলিপি ও বইপত্র সংরক্ষিত আছে। যা এই উপমহাদেশে একটি অন্যতম প্রাচীন সংগ্রহশালা হিসেবে বিবেচিত। এসময় কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন, রামমালা গ্রন্থাগারের দায়িত্ব গ্রন্থাগারিক কমল চক্রবর্তীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।