
মাহফুজ আহম্মেদ, কুমিল্লাঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গৌরসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনর রশিদ সরকারকে আবেগঘন সংবর্ধনার মাধ্যমে বিদায় জানালেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। সোমবার (৩ নভেম্বর ২০২৪) সকাল ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে পুরো পরিবেশ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলোয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে অতিথি ও বিদায়ী শিক্ষককে বরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আশিকুর রহমান সরকার ও কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় পরবর্তী পর্বে শুরু হয় মূল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. আবু মুসা সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনাব মো. জাকির হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম এ বাসার, আমিরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, বাকসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, উনঝুটি পাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এবং ভৈষেরকুট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসলিমা আক্তার সাথী।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জনাব আয়েশা আক্তার।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক মফিজুল ইসলাম, রাহেলা বেগম মজুমদার, মহসিন সরকার, জহিরুল ইসলাম মাস্টার, ফেরদৌসী বেগম, ইকরামুজ্জামান, নজরুল ইসলাম, মাহাবুবা আক্তার, মিজানুর রহমান এল.টি., ফখরুল ইসলাম ভূঁইয়া, আবদুস সালাম, আবুল কালাম আজাদ, ময়নাল হোসেন ও হাবিবুর রহমান আখন্দসহ আরও অনেকে।
গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক আবুল হাসেম মাস্টার, আবদুল মোমেন, মিন্টু, রাব্বির হাসান, তাজুল ইসলাম, ফরহাদ হাসান দুলু, জাহাঙ্গীর আলম, আলাউদ্দিন, হাজী ইউনুস, কাউছার সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা চান মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলাউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম, পিটিএ সভাপতি হারুনুর রশিদ ও সদস্য জাকির হোসেনসহ অসংখ্য স্থানীয় মানুষ। তরুণ প্রজন্মের রাজিব, জাহিদ, ইসমাইল হোসেন, সাগর, আল আমিন মানিকসহ অনেকে অংশগ্রহণ করেন।
বিদায়ী বক্তব্যে আবেগাপ্লুত প্রধান শিক্ষক হারুনর রশিদ বলেন, এই বিদ্যালয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো কেটেছে। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা, সহকর্মীদের সহযোগিতা ও এলাকাবাসীর সম্মান—এগুলোই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমি শিক্ষকতা করেছি ভালোবাসা দিয়ে, দায়িত্ব হিসেবে নয়। আজকের এই সম্মাননা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। গৌরসার ও এখানকার প্রতিটি মানুষ আমার হৃদয়ে চিরদিন থাকবে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানান। ফুলে সাজানো বিশেষ গাড়িতে হারুনর রশিদকে বিদায় দেওয়ার মুহূর্তে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধান শিক্ষক হারুনর রশিদ গৌরসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ছয় বছর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্যালয় অর্জন করেছে নানা সাফল্য, আর শিক্ষার্থীরা পেয়েছে আদর্শ শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক।
এলাকাবাসীর এই রাজকীয় বিদায় যেন প্রমাণ করে—একজন প্রকৃত শিক্ষকের প্রভাব ও ভালোবাসা কখনও ম্লান হয় না; তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে থাকে হৃদয়ের গভীরে।