মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন

১৬ বছর পর সম্মেলন, সভাপতি-সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তিন পদে লড়বেন ১১ নেতা

  • আপডেট সময়: শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১০৩ দেখেছেন :

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুমিল্লা দক্ষিণ বিএনপি

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। এর পর থেকে বেশ কয়েকবার আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই’ সীমাবদ্ধ ছিল। এতে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিলেন নেতা-কর্মীরা। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কুমিল্লায় চাঙা হয়ে ওঠে বিএনপির রাজনীতি।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন। ১৭ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে উচ্ছ্বসিত দলটির নেতা-কর্মীরা। সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ইতিমধ্যে সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন এলাকা।

শুরু থেকেই নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, এবার ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব পাবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি। শেষ পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের সেই প্রত্যাশা অধরা থেকে যাচ্ছে। একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি হতে যাচ্ছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের (সুমন)। তিনি কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আর সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন বর্তমান সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ (ওয়াসিম)। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের সর্বশেষ ভিপি।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামীকাল শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সম্মেলনের উদ্বোধক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা (বুলু)। বর্ণাঢ্য আয়োজনে সম্মেলন করতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন ধরে টাউন হল মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে।

সম্মেলনে পাঁচটি পদে ভোট হওয়ার কথা। কেন্দ্র থেকে পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী হলেও বাকি তিনটি পদে একাধিক পদপ্রত্যাশী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদে তিনজন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক পদে চারজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহারের শেষ দিন।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিরুজ্জামান, সাবেক সদস্যসচিব ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং বিএনপি নেতা ইকরামুল হক। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক পদপ্রত্যাশী চারজন হলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার জাহান ভূঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সভাপতি কামরুল হুদা, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুব আলম চৌধুরী ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সাবেক সহসভাপতি আমান উল্লাহ। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সারওয়ার জাহান ভূঁইয়া ও মাহাবুব আলম চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ পদের বাকি দুজন হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা জামান ও নজরুল হক ভূঁইয়া।

সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. ইউসুফ আলী বলেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আওতাধীন উপজেলা ও পৌরসভা মিলিয়ে মোট ১৪টি ইউনিট আছে। প্রতিটি ইউনিট থেকে ১০১ জন কাউন্সিলর (ভোটার) আছেন। সে ক্ষেত্রে কোনো পদে ভোট হলে মোট ১ হাজার ৪১৪ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাঁরা ভোটের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিল আয়োজন করতে প্রস্তুত। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন—এটা প্রায় নিশ্চিত।

দলীয় সূত্র জানায়, জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে দক্ষিণের ১০টি উপজেলা ও চারটি পৌরসভা নিয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট। দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয় কুমিল্লা নগরে, সাংগঠনিকভাবে এ ইউনিট বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

তিন মাস মেয়াদি ওই কমিটির মাধ্যমে দক্ষিণ জেলার আওতাধীন সব উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের সম্মেলনে সভাপতি হয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম রাবেয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন উর রশিদ (ইয়াছিন)।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ বলেন, শনিবার বেলা তিনটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শুরু হবে। টাউন হল মাঠে প্যান্ডেলের কাজ চলছে। কষ্ট লাগছে, যে পরিমাণ নেতা-কর্মী উপস্থিত হবেন—তার চার ভাগের এক ভাগেরও মাঠে জায়গা হবে না। কিন্তু নগরে তেমন কোনো মাঠ না থাকায় টাউন হলেই সম্মেলন করতে হচ্ছে। বাকি নেতা-কর্মীরা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেবেন সুশৃঙ্খলভাবে। সম্মেলনের কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আশা করছেন, ২৭ তারিখে কুমিল্লার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও সেরা সম্মেলন হবে।

আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দেবেন। বর্তমানে দলে কোনো কোন্দল না থাকায় সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনন্য ক্যাটাগরির সংবাদ
© All rights reserved © Comillakantha.com
Theme Customized By Mahfuz