অনলাইন ডেক্স |
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এতে মানুষের সব বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান রয়েছে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে দেখা যায়, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে চিকিৎসকের জন্য নানা ধরনের গিফট দেয়া হয়।
এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, যেসব ওষুধ আগে থেকেই বাজারে আছে এবং যেগুলোর ব্যাপারে নতুন করে অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন নেই- চিকিৎসকের জন্য এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা জায়েজ নয়। ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসকদেরকে ওষুধগুলো আর্থিক সুবিধা হিসেবে দিয়ে থাকে। যেন চিকিৎসক রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে তাদের কোম্পানির ওষুধের নাম লেখেন।
তাই তো দেখা যায়, রোগী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপত্র চেক করে দেখে যে, তাদের ওষুধের নাম লিখেছে কি না। এ থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি শরিয়তে নিষিদ্ধ ‘রিশওয়াত’ তথা উৎকোচের শামিল; যা সম্পূর্ণ হারাম। (আলমাবসূত, সারাখসী ১৬/৮২; রদ্দুল মুহতার ৫/৩২৬)
হাসপাতালগুলোতে আরও দেখা যায়, ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপহার উপঢৌকন ও সুবিধা পেয়ে চিকিৎসক কখনো রোগীর প্রয়োজন না থাকলেও ওই কোম্পানির ওষুধ রোগীকে লিখে দেন। কখনো টার্গেট ফিলাপ করার জন্য অতিরিক্ত ওষুধ লিখতে থাকেন।
কোনো রোগী যখন চিকিৎসা ফির মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়, তখন যে কোম্পানির ওষুধ রোগীর জন্য উত্তম ও কল্যাণকর, সে ওষুধ লিখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া ডাক্তারের দায়িত্ব হয়ে যায়। এই দায়িত্বের বিনিময়েই মূলত ডাক্তাররা রোগী থেকে ফি নিয়ে থাকে। সুতরাং এ দায়িত্ব পালনের জন্য, ওষুধ কোম্পানি থেকে বিনিময় নেওয়া, তা যে নামেই হোক; ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। আর ঘুষ নেয়া যেমন হারাম, তেমনি ঘুষ দেয়াও জঘন্য রকমের হারাম।
‘‘তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ থেকে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের দরবারে ওটার আর্জি পেশ করো না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮),,
সাধারণত অন্যের হক অন্যায়ভাবে নিজের করার জন্যই মানুষ ঘুষের আশ্রয় নিয়ে থাকে। ঘুষের মাধ্যমে মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চায়, যা কোরআনের আয়াতের আলোকে সম্পূর্ণ হারাম। এভাবে অবৈধ সুবিধা আদান-প্রদানকারীদের আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
‘‘বিচার-ফায়সালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের ওপরে মহান আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস: ১৩৩৬),,
তবে ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে চিকিৎসকদেরকে যেসকল ওষুধ দেওয়া হয় তা যদি এমন হয় যে, ওষুধটি সম্প্রতি বাজারে এসেছে এবং চিকিৎসককে এটি দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, এ ওষুধের সঙ্গে পরিচিতি এবং এর গুণগত মান ও কার্যকারিতা যাচাই করা; তাহলে চিকিৎসকের জন্য ওষুধটি নেওয়া জায়েজ হবে। এমন ওষুধ চিকিৎসক নিজেও ব্যবহার করতে পারবেন এবং নিজের পরিবারের লোকদেরকেও দিতে পারবেন। তেমনি অন্য যে কোনো রোগীকেও বিনামূল্যে দিতে পারবেন। কিন্তু এসব ওষুধ বিক্রি করে নিজে এর মূল্য ভোগ করা বৈধ হবে না।
ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হল, একটি কাজের জন্য দুই পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বা সুবিধা ভোগ করা জায়েজ নয়। কেননা এর কারণে ব্যক্তি ইনসাফ ও ন্যায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারেন না।