‘আইনজীবী কালাম হত্যা মামলায় সাবেক এমপি বাহার, সুচনাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট‚
স্টাফ রিপোর্টার
জুলাই আন্দোলনে কুমিল্লা নগরীতে গুলি করে এডভোকেট আবুল কালাম আজাদকে হত্যার ঘটনায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে। এতে সদর আসনের
সাবেক এমপি আ ক ম বাহা উদ্দিন, বাহারের মেয়ে ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা.তাহসিন বাহার সূচনা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হান আহমেদসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর আজ রোববার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা ১২টি হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪২ মামলার মধ্যে এটাই প্রথম মামলা, যার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হলো।
এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। এ দিন বিকেলে কুমিল্লার আদালতে হামলার খবর পেয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট কাইমুল হক রিংকু, এড.আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী সেখানে যান। এরপর ফেরার পথে নগরীর মোগলটুলী তারা পৌছলে তাদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষনের ঘটনা ঘটে। এতে আবুল কালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন আরও অনেকেই। আশংকাজনক অবস্থায় কুমিল্লা থেকে এডভোকেট কালামকে ঢাকার ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে লাইফ সার্পেটে থাকা অবস্থায় ১৫ আগষ্ট বিকেলে তার মৃত্যু হয়। আবুল কালাম জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। তিনি কুমিল্লা নগরীর রানীর দিঘীর দক্ষিণ পাড় এলাকায় বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে।
এ ঘটনায় কালামের সহকারী আইনজীবী মোস্তাফা জামান জসিম বাদী হয়ে সাবেক কাউন্সিলর রায়হান ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমাম হোসেন ওরফে বাচ্চুসহ ৫
জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল ‘নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল ছোড়ে। এ সময় অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ কোমরে গুলিবিদ্ধ হন এবং রিংকু ও তার দুই ছেলেসহ আরো ৬-৭ জন আইনজীবী আহত হন।’
মামলার অভিযোগ থেকে বাদ বাচ্চু :
পুলিশ জানায়, এ মামলায় গত ৩০ মার্চ গ্রেপ্তার হন বাচ্চু। পরে ৩১ মে কারাগারে সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করলে ইমামকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকাল ৯টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি হৃদ্ধসঢ়;রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কালাম হত্যার ঘটনায় করা মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন ইমাম হোসেন বাচ্চু। মারা যাওয়ায় তাকে মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কুমিল্লা আদালতের পিপি এডভোকেট কাইমুল হক রিংকু বলেন, ‘বিজয়ের দিন (৫ আগষ্ট) আমার সামনেই আমাদের সহকর্মী কালাম গুলিবিব্ধ হন। আমরা অনেকেই আহত হই। বিনা উক্কসানীতে আমাদের উপর সেই দিন গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। আমরা এ হত্যা মামলার দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবি করছি।’
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, মামলার এজাহারে প্রথমে ৫ জনের নাম থাকলেও তদন্তে সাবেক এমপি বাহার , তার মেয়ে ডা. সূচনা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকনের ইন্ধনে ও পরিকল্পনায় হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে বিষয়ে সাক্ষী প্রমান পাওয়া গেছে। অপর আসামিরা সরাসরি ঘটনায় জড়িত থাকায় তাদের নাম এসেছে।