অনলাইন ডেক্স |
২০২৪ সালের ৫ই অগাস্ট ছিল ভারতে পার্লামেন্টের মনসুন সেসনের শেষ সপ্তাহের প্রথম দিন। অধিবেশনে অনেকগুলো জরুরি বিল তখনও পাস করানোর বাকি, অথচ হাতে সময় খুব কম – কাজেই ট্রেজারি বেঞ্চের ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। রাজধানীতে নেতামন্ত্রীদের দৌড়োদৌড়ি চলছিল যথারীতি।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সবচেয়ে আস্থাভাজন তিন লেফটেন্যান্ট –পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ –তাদের কিন্তু সতর্ক নজর রাখতে হচ্ছিল একটি প্রতিবেশী দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের দিকে।
সেদিন সকাল থেকেই বাংলাদেশে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দিয়ে লাখ লাখ বিক্ষোভকারীর রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে ফেলার কথা–প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে সেই পরিস্থিতি সামাল দেন, এই ‘ত্রয়ী’ চোখ রাখছিলেন সে দিকেই। খবর বিবিসি বাংলার।
কারণ সেই আন্দোলনের পরিণতি যা-ই হোক, ভারতের ওপর তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়তে বাধ্য এবং যতই হোক, প্রধানমন্ত্রীর টিমে দেশের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কান্ডারী এই তিনজনই।
এবং তাদের প্রত্যেকের কাছেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ‘ব্রিফ’ ছিল –শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হয়তো এই সংকটও ‘সারভাইভ’ করে যাবেন।
ঠিক এই জন্যই ৫ই অগাস্ট সকালেও ভারত সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি, দিনের শেষে সেই শেখ হাসিনাই নাটকীয় পরিস্থিতিতে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন।
এমনিক, ৫ই অগাস্টের আগে শেষবার (সম্ভবত রোববার ৪ঠা অগাস্টেই) যখন হটলাইনে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথাবার্তা হয়, তখনো এই ধরনের কোনো সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাই হয়নি।
তবে দুই দেশের দুই সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান, ভারতের জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ও বাংলাদেশের জেনারেল ওয়াকার উজ জামান অবশ্য তার কয়েকদিন আগে থেকেই নিজেদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগে ছিলেন।
পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল এবং বাংলাদেশের মাটিতে সেনা পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও ভারত যে অন্য সব রকমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত –সেই বার্তাও দিয়ে রাখা হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫ অগাস্ট যেভাবে ঘটনাপ্রবাহ মোড় নিল বা ‘আনফোল্ড’ করল, তার জন্য দিল্লি যে ঠিক ‘প্রস্তুত’ ছিল সে কথা বলা যাবে না। কারণ জীবন বাঁচাতে শেখ হাসিনাকে শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগ করতে হবে –প্রায় ধরেই নেওয়া হয়েছিল এরকম সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।