ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। রোববার মামলার প্রধান আসামি অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তবে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় অপর আসামি জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অবন্তিকার মায়ের করা মামলায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে আসামি করা হয়। তদন্তে জবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ ২৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবন্তিকার মোবাইল ফোনে থাকা বেশ কিছু ছবি, স্ক্রিন শট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপের কিছু ক্ষুদে বার্তা জব্দ করা হয়। তার ফেসবুকে দেওয়া ‘সুইসাইড নোট’ পর্যালোচনা করা হয়েছে। মোবাইলটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে প্রতিবেদন আনা হয়। আম্মান বিভিন্নভাবে অবন্তিকাকে মানসিকভাবে হয়রানি করতেন। মোবাইলে এমন কিছু ক্ষুদে বার্তাও পাওয়া গেছে। এসব হয়রানির কারণে অবন্তিকা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
গত বছরের ১৫ মার্চ রাতে কুমিল্লার নগরীর একটি ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। আত্মহত্যার আগে তিনি নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মানসহ কয়েক সহপাঠীর বিরুদ্ধে হয়রানি ও উৎপীড়নের নানান অভিযোগ করে যান। এ ঘটনায় পর দিন তার মা তাহমিনা শবনম কোতোয়ালি মডেল থানায় দু’জনকে আসামি করে ও অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন।
বাদী তাহমিনা শবনম বলেন, ‘মেয়ের মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িতরা শাস্তি পাওয়া নিয়ে আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিলাম। তদন্তের নামে জবি প্রশাসন এ পর্যন্ত কারও শাস্তি নিশ্চিত করেছে কিনা, তাও জানতে পারিনি। যে জবি প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগ করেও মেয়েকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পরিনি, সেই প্রশাসনের কর্মকর্তারা কীভাবে এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে? পুলিশের তদন্তে কীভাবে দ্বীন ইসলামকে রেহাই দেওয়া হয়?
তিনি হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অবন্তিকার মতো হাজারো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কেউ কেউ নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই পরিণতি হয় মৃত্যু, কিংবা নানান মিথ্যা অপবাদ।