
মাহফুজ আহম্মেদ, দেবিদ্বারঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বারে গ্রামের ভেতর দিয়ে রেললাইন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাফুরখাড়া গ্রামে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে হাপুরখাড়া, রাজামেহার ও সোতপুকুরিয়া এই তিন গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নিয়ে রেল প্রকল্পের এই ‘অমানবিক সিদ্ধান্তের’ তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত রেল লাইনটি গ্রামের ভেতর দিয়ে গেলে গ্রামের স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, কবরস্থানসহ অসংখ্য বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে পুরো গ্রামই ধ্বংসের মুখে পড়বে। তারা বলেন, “আমরা কৃষক, নিম্নবিত্ত মানুষ—এই জমিই আমাদের জীবন, এই ঘরই আমাদের আশ্রয়। গ্রামের ভিতর দিয়ে রেল লাইন গেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।”
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সরকার তিনগুণ ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবে কার্যকর কোনো সমাধান নয়। কারণ বর্তমানে প্রতি শতাংশ জমির বাজারমূল্য এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা হলেও, মৌজার দর নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টাকা। ফলে তিনগুণ ক্ষতিপূরণেও প্রকৃত ক্ষতি পূরণ সম্ভব নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনা ও বসতবাড়ি রক্ষা করে রেল লাইন গ্রামের ভেতর দিয়ে না নিয়ে বিকল্প পথে নেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রেলওয়ের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্প নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রকল্পে ঢাকা-কুমিল্লা দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০কিলোমিটার। বর্তমানে রেলপথের আখাউড়া,ভৈরব,নরসিংদী,গাজীপুর ২০০ কিলোমিটার বাড়তি পথে ঢাকা যেতে হয়। ঘুরপথ বাদ দিয়ে কুমিল্লা থেকে বুড়িচং, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথকে মাত্র ৯০ কিলোমিটারে কমিয়ে আনা হবে। তবে প্রস্তাবিত রুটটি আবাসিক এলাকা ও জনবসতির মধ্য দিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র বিরোধিতা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি রেলওয়ের কর্মকর্তারা হাপুরখাড়া এলাকায় এসে রেল রাস্তার সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করেন। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হিরন সরকার, ক্ষতিগ্রস্ত গিয়াস উদ্দিন লিটন, মো. মোতালেব হোসেন, মো. হেলাল উদ্দিন, মো. বাচ্চু পুলিশ, মহসিন মুন্সী ও মো. সোহেল মুন্সী প্রমুখ।
রেলওয়ে কুমিল্লার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, কুমিল্লা থেকে ঢাকা সরাসরি কর্ডলাইন স্থাপনের মাঠ পর্যায়ের জরিপ চলছে। সেটি কুমিল্লার বানাশুয়া রেল ব্রিজের পাশ দিয়ে বুড়িচং, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা গিয়ে মিলতে পারে। এই রুটের জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে। এরুট চালু হলে কুমিল্লা থেকে ঢাকার দুরুত্ব ২ ঘন্টা কমে যাবে।