মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন

দেবিদ্বারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

  • আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২২৫ দেখেছেন :

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে—ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ, অডিট কমিটি ছাড়াই অনুমোদন, অডিট প্রতিবেদনে অসংগতি, জাল রেজ্যুলেশন তৈরি, গোপন রেজ্যুলেশন বই রচনা, বেআইনি বরখাস্ত এবং আর্থিক জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের। সর্বশেষ অভিযোগ অনুযায়ী, চার লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় রহিমা বেগম নামের এক আয়াকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, পরীক্ষা ফি, সেশন চার্জ, বিজ্ঞানাগার, খেলাধুলা, স্কাউট, গ্রন্থাগার, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাতে সংগৃহীত মোট ৪৩ লাখ ৫৯৫ টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি গঠন করে আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদনের কথা থাকলেও, ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো অডিট কমিটি গঠন বা নিরীক্ষা করা হয়নি। বরং ব্যাংকে জমা না রেখে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক নিজেই কৃত্রিমভাবে অডিট প্রতিবেদন তৈরি করে সভার কার্যবিবরণীতে অনুমোদিত হিসেবে দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে সাবেক সভাপতি লিখিতভাবে জানিয়েছেন, উক্ত রেজ্যুলেশন টেম্পারিং করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন আয়া রহিমা আক্তারকে কোনো লিখিত নোটিশ ছাড়াই মৌখিকভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন।

এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, তৎকালীন সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অজ্ঞাতসারে উক্ত রেজ্যুলেশন তৈরি করা হয়েছিল।

এদিকে এসব ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন—“যে প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠছে, সেখানে যদি এমন অর্থ আত্মসাৎ হয়, তবে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কোথায় থাকে?” অভিভাবকদের দাবি, এই দুর্নীতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এমন অপকর্ম আরও উৎসাহিত হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “বিদ্যালয় চলে বিদ্যালয়ের নিয়মে, একজন প্রধান শিক্ষক একা কোনো বিদ্যালয় চালাতে পারে না। যদি কোনো অনিয়ম বা অর্থ আত্মসাৎ হয়ে থাকে, তদন্ত কমিটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়ের কিছু বিষয়ে অসংগতি লক্ষ্য করেছি। রেজ্যুলেশন টেম্পারিং করা হয়েছে, এজন্য প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। আগামীকাল ১২ অক্টোবর তার জবাব দেওয়ার শেষ তারিখ। তবে তিনি এখনো কোনো জবাব দেননি।

তিনি আরও বলেন, “আমি এডহক কমিটির সদস্য হিসেবে বিষয়গুলো বোর্ডে ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে জানিয়েছি। নিরীক্ষা বিভাগেও অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো অভিযোগ নেই, তবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি তার কাছে জবাবদিহিতা চেয়েছি।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, “ইতোমধ্যে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা পরিদর্শক ড. দিদারুল ইসলাম ও চন্দন কুমার দেব-কে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১৯ অক্টোবর সকাল ১০টায় দেবিদ্বার সুজাত আলী সরকারি কলেজে স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনন্য ক্যাটাগরির সংবাদ
© All rights reserved © Comillakantha.com
Theme Customized By Mahfuz