মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লায় মণ্ডপকাণ্ডের ১১ মামলার মামলার একটিরও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি

  • আপডেট সময়: শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৯০ দেখেছেন :

 

কুমিল্লা কণ্ঠ রিপোর্ট :
কুমিল্লা নগরীতে ৪ বছর আগে বহুল আলোচিত মণ্ডপকাণ্ডের ঘটনার সহিংসতা ভুলে এবারের দূর্গাপূজা শেষ হয়েছে। এ বছর জেলার ১৭ উপজেলার ৮১৮টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়। ২০২১ সালে নানুয়াদিঘির উত্তর পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন থানায় মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় আদালতে চার্জশিট দেয়া ১১ মামলার একটিও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। পলাতক আছে অধিকাংশ আসামি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এদের মধ্যে প্রধান আসামি ইকবাল ছাড়া সকল আসামি জামিনে আছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর ভোরে নগরীর নানুয়াদিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে অবমাননাকে কেন্দ্র করে পরে নগরীর চারটি মন্দির ও সাতটি মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই দিন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে পাশের জেলার বাইরে নোয়াখালী, চাঁদপুর ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায়। এ ঘটনায় জেলার কোতয়ালী থানায় ৮টি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ২টি এবং দেবিদ্বার ও দাউদকান্দি মডেল থানায় ১টি করে মামলা দায়ের করা হয়। ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১২ মামলার মধ্যে ১১টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। এর মধ্যে সিআইডি ৬টি মামলা, পুলিশ পিবিআই ৩টি মামলা এবং কোতয়ালী থানা পুলিশ ২টি মামলার চার্জশিট দেয়। দেবিদ্বার থানায় দায়ের করা একটি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয় পিবিআই। ১১ মামলায় ২৫৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয় ।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, তাদের ছয় মামলার মধ্যে মণ্ডপে কোরআন রাখায় ইকবালসহ পাঁচ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়। ইকবাল ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন কোরআন দেখে ৯৯৯ খবর দেওয়া নগরীর মৌলভীপাড়ার ইকরাম হোসেন ওরফে রেজাউল হক, পাশের দারোগাবাড়ির মাজারের সহকারী খাদেম আশিকুর রহমান ফয়সাল, তার সঙ্গী মো. হুমায়ুন কবির এবং সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন আহমেদ বাবু। সব মিলিয়ে সিআইডির ছয় মামলায় মোট ১০৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়।

পিবিআই চার্জশিট দেয়া মামলার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা আলোচিত গোলাম মাওলার মামলাটি রয়েছে। মণ্ডপ থেকে কোরআন শরীফ উদ্ধারের পর সেই গোলাম মাওলাই ফেসবুক লাইভে এসে সারা দেশের দেশে ঘটনা ছড়িয়ে দেন। পরে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস সমকালকে বলেন, মামলার একমাত্র আসামিই ছিলেন গোলাম মাওলা। সে প্রথম লাইভে এসে বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়, তদন্তে তা প্রমানীত হয়েছে। এছাড়াও পিবিআই হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৩টি মামলায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। কোতয়ালী থানা পুলিশ দুটি মামলায় ১০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। দুটি মামলায়ই আলোচিত ইকবাল আসামি।

ঘটনার দিন মনোহরপুর কালিবাড়িতে বহিরাত লোকজনের হামলায় ইটের আঘাতে প্রথমে আহত এবং পরে ওই বছরের ২১ অক্টোবর রাতে ঢাকা মেডিকেলে মারা যান দিলীপ কুমার দাস (৬০)। গত ৫ বছরেও সরকারি কোন সহায়তা পায়নি তার পরিবার। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মন্দিরের হামলা সনাক্ত হলেও কার ইটের আঘাতে দিলীপ মারা গেছেন তা সনাক্ত করা যায়নি। এ হত্যা মামলায় ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পিবিআই। নিহত দিলীপ দাসের স্ত্রী রুপা দাস বলেন, ‘সবার সামনে লোকটাকে মারলো। আসামি তো চিহিৃত না হওয়ার কথা নয়। হয়তো সাক্ষী প্রমানের অভাবে বিচারও পাবো না।’

# ইকবাল ঘুরছে কারাগার থেকে কারাগার :
এদিকে মণ্ডপকান্ডে সারা দেশে আলোচিত ইকবাল ঘটনার পর ২০২১ সালে ২১ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার হন। সে কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্কর পুকুর এলাকার নূর আহমদ আলমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ধর্মীয় অবমাননা ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে কুমিল্লা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন থানায় ৩৯টি মামলা হয়। গাজিপুরের ঘটনায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় ২০২৩ সালের ২ মার্চ এক বছর চার মাস সাজা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে হাজিরা দিতে ইকবাল কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে যাচ্ছেন।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো: আব্দুল্ল্যাহেল আল-আমিন বৃহস্পতিবার বলেন, কারাগারে থাকা নথি অনুসারে ইকবালের বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। মামলার হাজিরার প্রয়োজনে তাকে বিভিন্ন সময়ে কারাগার স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ তাকে নোয়াখালী কারাগারে পাঠানো হয়।

কুমিল্লা আদালতের পিপি এডভোকেট কাইমুল হক রিংকু বৃহস্পতিবার বলেন, কুমিল্লায় দায়ের হওয়া মামলার অধিকাংশ আসামি এখনো পলাতক। তাই কিছু মামলার চার্জ গঠনও বাকী আছে। যারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এদের মধ্যে প্রধান আসামি ইকবাল ছাড়া সব আসামিই জামিনে আছেন। এখনো কোন মামলারই এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। তাই বিচার কাজ শেষ হতে আরও অনেক সময় লাগবে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন জানান, ‘অতীতের সব অপ্রীতিকর ঘটনা মাথায় রেখে এবারের পূজায় জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৯শ ৫০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ও পূজা উদযাপন কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা সহায়তা করেছেন।

 

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনন্য ক্যাটাগরির সংবাদ
© All rights reserved © Comillakantha.com
Theme Customized By Mahfuz