
অনলাইন ডেক্স
কমপ্লিট শাটডাউন, ভিসির বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘটনায় উত্তেজনা-অস্থিরতার পর পূজার ছুটির কারণে ও ছাত্রদলসহ ৫ প্যানেলের দাবিতে পিছিয়ে গেলো রাকসু নির্বাচন। ২৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে আগামী ১৬ অক্টোবর নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার রাতে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাকসু নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সভায় আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনপূর্ব উদ্ভুত পরিস্থিতি সার্বিকভাবে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। এ সভা লক্ষ্য করা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূলে নয়।
কারণ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘোষিত “কমপ্লিট শাটডাউন” কর্মসূচি চলছে। এছাড়া নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি।
এতে আরও বলা হয়, উপর্যুক্ত বিবেচনায় রাকসু নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার স্বার্থে কমিশন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের পরিবর্তে আগামী ১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।
এ বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন কমিশন দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এদিকে রাকসু নির্বাচন পেছানোর প্রতিবাদে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির।
বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রশিবির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলেছে। বার বার নির্বাচন পেছানোর যে অপরাজনীতি করছে, তা শিক্ষার্থীরা ৩৫ বছর থেকে দেখে দেখে বিরক্ত। আমরা ইসলামী ছাত্রশিবির ২৫ তারিখেই নির্বাচন চাই।’
ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা (ছাত্রশিবির) মানছে না কিন্তু মানতে হবে। ক্যাম্পাসের এই অবস্থায় এখন কোনোভাবেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।’
রাকসু নির্বাচন পেছানোর দাবি ছাত্রদলসহ ৫ প্যানেলে
পোষ্য কোটাকে ইস্যু করে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং দুর্গাপূজার ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার কারণে রাকসু নির্বাচন পেছানোর দাবি করেছে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলসহ অন্তত পাঁচটি প্যানেল, ২০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং হল সংসদের প্রার্থীরা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে প্যানেলগুলোর সম্মিলিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
তবে ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেছেন, ‘পূজার আগে নির্বাচন হলেই অংশগ্রহণ বেশি হবে। পরে হলে আরও কম হবে। আমরা চাই ২৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচন হোক।’
চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, ফাঁকা রাবি ক্যাম্পাস
এদিকে রাকসু নির্বাচনের আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি) শুরু হয়েছে। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই কর্মসূচি ডাকা হয়েছে। ফলে ক্যাম্পাস পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে পড়েছে, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। প্রশাসন ভবনের সামনে ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে বসে সময় কাটাচ্ছেন কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারীরা। প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন দপ্তরে তালা ঝুলছে।
ক্যাম্পাসের বাস চললেও শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি। খাবার দোকানগুলোতে আসন ফাঁকা, বেশিরভাগ দোকান বন্ধ।
গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে সভা শেষে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম। অফিসার সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ঘোষণা দিয়েছেন।