
- *ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে হত্যা; পুলিশ।
 
- *আমাদের তেমন কোনো শত্রু ছিল না; নিহতের স্বজন।
 
- *হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে কবিরাজ গ্রেফতার।
 
 
স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লা নগরীর একটি ভাড়া বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রী ও তার মায়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরআগে রেববার (৭সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি এলাকার নেলী কটেজ নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন রিন্তি ও তার মা কুমিল্লার আদালতের হিসাবরক্ষক প্রয়াত হাজী নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৫২)।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। তিনি হলেন- কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের কবিরাজ মাওলানা আব্দুর রব (৭৩)। নিহত মা-মেয়ে এ কবিরাজের থেকে চিকিৎসা নিতেন।
কুমিল্লা শহর অচলের হুঁশিয়ারি:
হত্যাকান্ডে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার বিলম্ব হলে কুমিল্লা শহর অচলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এসময় তারা ‘বিচার, বিচার, বিচার চাই; প্রশাসন বিচার চাই; আমার বোন কবরে; খুনি কেনো বাহিরে; সুমাইয়ার রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ নানা স্লোগান দেন তারা। এছাড়াও কুবির ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তার মা হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোঃ হায়দার আলী। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঘাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মানববন্ধনে কুবি শিক্ষার্থী হাসান অন্তর বলেন, কুমিল্লায় সুমাইয়া ও তার মাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঠিক তদন্ত না হলে কুমিল্লা শহর অচল করে দেওয়া হবে।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া আফরোজ বলেন, আমাদের সহপাঠী ও তার মায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, যেন আর কোনো পরিবার এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি:
নিহতের তাহমিনা বেগম বড় ছেলে আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মা-বোনের হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত এবং খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে বলেন, আমাদের তেমন কোনো শত্রু ছিল না। কারা এভাবে আমাদেরকে নিঃস্ব করল জানি না।রোববার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে বাসায় এসে দেখি দরজা খোলা। একটি টুল দিয়ে দরজা মিলিয়ে রাখা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করে দেখি লাইট বন্ধ। লাইট অন করতেই দেখি বোনের কক্ষে তাঁর নিথর দেহ পড়ে আছে আর মায়ের কক্ষে মায়ের নিথর দেহ। আমরা জানি না কে বা কারা আমার মা ও বোনকে হত্যা করেছে।
সিসিটিভির ফুটেজে যা মিলেছে:
রোববার সকাল  ৮টা ৮ মিনিটে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মাথায় টুপি পাঞ্জাবি পাজামা পড়া বাসায় প্রবেশ করে। বেলা ১১ টা ২২ মিনিটে সিসিটিভির ফুটেযে দেখা যায় বাসা থেকে বের হতে। আবারও বেলা ১১টা ৩৪ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন তিনি। তবে দুপুর ১ টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত আর কোন সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যায়নি।
বাড়ির মালিক আনিসুল ইসলাম রানা বলেন, আদালতের হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের  মৃত্যুর পর তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সন্তানদের নিয়ে এ বাসায় থাকতেন। তাঁরা অন্য কারো সাথে তেমন কথা বলতেন না। গতকাল রাতে তার দুই ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় আসলে তারা ঘরের দরজা খোলা দেখে। এই সময় তারা ভাবে তাদের মা ও বোন ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু বাসায় ঢুকার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাদের কোন সাড়া শব্দ না পেলে জাগাতে গিয়ে দেখেন তারা নড়ছে না। পরে ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ গভীররাতে ঘটনাস্থলে আসে।
পুলিশের ধারণা হত্যাকাণ্ড:
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছে বিষয়টি হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, তাদের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইফুল মালিক বলেন, আলাদা দুটি কক্ষ থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
কুমিল্লা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা দ্রুততম সময়ে দোষীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করব। ইতোমধ্যে কিছু আলামত পাওয়া গেছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলছে।