মোঃ আব্দুল গাফফার সুমন, মনোহারগঞ্জ
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কের উপর বসছে কাঁচাবাজার, গরু-ছাগলের হাট। সড়কের উপর অবৈধভাবে এসব হাট বাজার বসায় তৈরী হচ্ছে যানজট, বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সড়কের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। জনদুর্ভোগ লাগবে ও পরিবেশ রক্ষায় সড়কের উপর হাট-বাজার অপসারনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের পশ্চিম-দক্ষিণ মাথায় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই সড়কের উপর বসছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর হাট। বাজারের ভিতরে সড়কের বিভিন্ন অংশে ‘দু’পাশে বসে তরকারি ও অন্যান্য জিনিষপত্র বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের ভিতরের সড়ক খুব বেশি প্রশস্ত না হওয়ায় যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। তাছাড়া অধিকাংশ সময় বেপরোয়া অটোরিক্সার দখলে থাকে বাজারের সড়কগুলো। বাজারের ভিতরে সড়কে পাশাপাশি দুটি অটো রিক্সা পার হতেই কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে ভারী যানবাহন প্রবেশ করলে বাজার এলাকায় তৈরী হওয়া যানজটে বেহাল অবস্থা তৈরী হয়। একই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার লক্ষণপুর বাজার সড়কের উপর। সেখানেও নাথেরপেটুয়া-হাসনাবাদ সড়কের লক্ষণপুর বাজার এলাকায় সড়কের উপর বসছে গরু ছাগলের হাট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনোহরগঞ্জ বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এখানে সপ্তাহে দু’দিন শুক্র ও সোমবার ভ্রাম্যমান তরকারি, গরু-ছাগল ও ধানের হাট বসে। বাজারের দক্ষিণপাশে রয়েছে মনোহরগঞ্জ দারুল উলুম কেরামতিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও মনোহরগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদ। বিশেষ করে সোমবারে মাদ্রাসা ছুটির সময় ও নামাজ শেষে মসজিদের মুসুল্লিরা বের হলে বাজারের সড়কগুলো জনাকীর্ণ হয়ে পড়ে। এ সময় বাজারমুখী মানুষের ভীড়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বাজারের সড়কগুলোতে হ-যব-র-ল অবস্থা তৈরী হয়। অনেক সময় দীর্ঘ যানজটে নাকাল হয়ে উঠে ঐ এলাকা। বাজারের পরিবেশ রক্ষায় সড়কের উপর বসা ভ্রাম্যমান হাট অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবী জানান সংশ্লিষ্টরা।
মনোহরগঞ্জ দারুল উলুম কেরামতিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. জিন্নত আলীর সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন সোমবারে মাদ্রাসা ছুটি হলে যানজট থাকলে বাজার এলাকা পার হতে শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়েন। তিনি বলেন মাদরাসার সীমানার মধ্যে বাজারের একটি শৌচাগার থাকায় হাটবার ছাড়াও এটি ব্যবহারের জন্য প্রতিনিয়ত এখানে লোকজনের ভীড় থাকে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্ভোগের কারন বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাজারের আশপাশে পর্যাপ্ত পরিমান সরকারী খাস ভূমি থাকলেও উপজেলা গঠনের ২০ বছরেও কর্তৃপক্ষ বাজারের ভিতরে মূল সড়ক থেকে ভ্রাম্যমান হাট অন্যত্র সরানোর উদ্যোগ না নেয়ায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মাসুদুল আলম বাচ্চু বলেন, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। সড়কের উপর পশুর হাট ও তরকারির হাট বসায় এখানে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বাজারের বিভিন্ন গলিতে অটোরিক্সা বিশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, এতে বাজার এলাকায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। সমস্যা সমাধানে সড়কের উপর থেকে ভ্রাম্যমান হাট বন্ধ করে দিতে হবে এবং বাজারের ভিতরে অযাচিতভাবে সড়ক দখল করে দাড়িয়ে থাকা অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রনে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে পর্যাপ্ত সরকারী খাস জমি রয়েছে, সেখানে বাজারের সড়কে বসা ভ্রাম্যমান যাবতীয় হাট স্থানান্তর করা হলে সমস্যা সমাধান হবে।যানজট নিরসনে বাজার এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি ইত্তেফাক-কে বলেন, মনোহরগঞ্জ বাজার এলাকায় যানজট নিরসনের বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় সভায় একাধিকবার তুলে ধরা হয়েছে। এখানে জনবল নিয়োগ এটি জেলা পুলিশ ও থানা পুলিশের দেখার বিষয়। অবৈধভাবে রাস্তার উপর বসা ভ্রাম্যমান হাট সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাজারের আশপাশে উপযুক্ত খাসের জায়গা পাওয়া গেলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি।
কুমিল্লার সহকারি পুলিশ সুপার সোমেন মজুমদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন বাজারের সড়কগুলো প্রয়োজনের তুলনায় একটু সংকীর্ণ। ভৌগোলিক কারনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, থানা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াত মনোহরগঞ্জ বাজারের উপর দিয়েই করতে হয়। প্রধান প্রধান কারনগুলো সনাক্ত করে যানজট নিরসনে বাজার ব্যবসায়ী কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহনের কথা জানান তিনি।