শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লা বিসিকে প্রকাশ্যে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, অজ্ঞাত ৪৫ জনের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

  • আপডেট সময়: শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৩ দেখেছেন :

স্টাফ রিপোর্টার :
কুমিল্লা নগরীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ‘চাঁদাবাজির’ অভিযোগে হাত পা বেধে প্রকাশ্যে মোহাম্মদ সায়েম (২২) নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও অভিযোগে কারও নাম নেই। শুক্রবার সকালে অজ্ঞাতনামা ৪০/৪৫ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করেন সায়েমের বাবা আমিনুল ইসলাম। ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে আমিনুল বলেছেন ‘ তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। শরীর থেকে সব রক্ত বের হয়ে গেছে। হাসপাতালে নিলে ছেলেটার জীবন বেঁচে যেত।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে বিসিক শিল্প নগরীর জান্নাত ফুডস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে আটকে রেখে হাত পা বেধে সায়েমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত মো. সায়েম রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার সোনাতন গ্রামের মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের ছেলে। পরিবারের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে সে বিসিকের অদূরে নগরীর অশোকতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ ঘটনায়

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলেন, নগরীর বিসিক শিল্প নগরীর আশোক তলার এস আলম স্টিল ভবনের নিচ তলার জান্নাত ফুডস কারখানাসহ বিসিক এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করে আসছিলেন সায়েম ও তার সঙ্গীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সে পূর্বের ন্যায় বিসিক এলাকায় চাঁদার দাবিতে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করে। এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। খবর পেয়ে রাতে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা তাকে আটক করে জান্নাত ফুডসে নিয়ে যায়। সেখানে তার হাত পা বেধে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্য চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জান্নাত ফুডস কারখানার একটি কক্ষের ফ্লোরে রক্তের দাগ, ওই কক্ষেই সায়েমের হাত পা বেধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভবনের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। ওপর দিকে আরেকটি ক্যামেরা থাকলেও সেটির মুখ উল্টো করে দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে রাখা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের ভবনের একজন বাসিন্দা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যুর খবরে উত্তেজিত লোকজন কারখানায় হামলা চালায় এবং ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
নিহত সায়েমের বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া যেত। আমার ছেলেটা খারাপ ছিল না। তার মায়ের মৃত্যুর পর এলাকার কিছু খারাপ ছেলের সঙ্গে কয়েক দিন মেশার কারণে মানুষ তাকে খারাপ বলতে শুরু করে। আমার বাড়ি রংপুর, এ জন্য কিছু হলেই আমার ছেলেকে ফাঁসানো হতো। আমার ছেলেকে মামলা দিয়েও ফাঁসানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় তাঁর ছেলে কোনো চাঁদাবাজি করতে যাননি। তাকে মারধর করার পর মাটিতে ফেলে রাখা হয়। সময় মতো হাসপাতালে নিলে তার জীবন বাঁচানো যেতো। মামলায় আসামি না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনা শত শত লোকের সামনে করা হয়েছে, পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম পরিচয় বের করবে বলেছে।

জান্নাতুল ফুড প্রোডাক্টসের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। তিন বছর ধরে আমাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে ঝামেলা করছে সায়েম। সে বিসিকে মানুষের টাকা ও মোবাইল ছিনতাই নিয়ে যেত। এখনো এসে সরাসরি চাঁদা চায়। চাঁদা না দিলে ক্ষতি করার হুমকি দিত। বৃহস্পতিবারও ঝামেলা করতে এসেছিল বলে শুনেছি।

কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, নিহত সায়েমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে কোতয়ালী মডেল থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে তার বাবা অজ্ঞাতনামা ৪০/৪৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে আশ পাশের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখনো কেউ আটক হয়নি। ওসির ভাষ্য মামলায় আসামি অজ্ঞাত থাকলেও জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনন্য ক্যাটাগরির সংবাদ
© All rights reserved © Comillakantha.com
Theme Customized By Mahfuz