দেবিদ্বার প্রতিনিধি ||
কুমিল্লার দেবিদ্বারে নামাজের সময় বক্তব্যকান্ডে ক্ষমা চেয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিস্টার রেজাউল আহসান মুন্সি। শুক্রবার বিকেলে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে মাধ্যমে তিনি ক্ষমা চান।
পোস্টে রেজাউল আহসান লিখেছেন, আমরা এখন উন্নত আধুনিক যুগে বসবাস করছি। পৃথিবী বদলে গেছে অনেক। আজকাল একটি ছোট ভিডিও যেটি হয়তো মাত্র ১-২ মিনিটের একজন মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারে। বাংলাদেশে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে, যা সামান্য খুঁজলেই পাওয়া যাবে। আমি বলছি না যে সব কিছু মিথ্যা, তবে সত্যের মধ্যেও অনেক সময় এমন কিছু থেকে যায় যা মানুষের চোখে পড়ে না।
গত দুই দিনে আমার সাথেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে।
৫ আগস্ট, স্বৈরাচার বিদায়ের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা বিজয় মিছিলের আয়োজন করেছিলাম। পূর্বনির্ধারিত সময় ছিল বিকেল ৩টা যা আসরের নামাজের সময় মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির কারণে প্রোগ্রাম যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবুও নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বৃষ্টিতে ভিজেই বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করছিলেন।
এটি ছিল চট্রগ্রাম সিলেট হাইওয়ে একটি ব্যস্ত রাস্তা। দীর্ঘ সময় রাস্তা বন্ধ থাকলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই প্রোগ্রাম দ্রুত শেষ করার। তখন আমি আমার এক কর্মীকে জিজ্ঞেস করি, আজান দিতে আর কতক্ষণ বাকি? তিনি জানান ৫ মিনিট। আমি সঙ্গে সঙ্গেই মাইক বন্ধ করতে বলি। কিছুক্ষণ পর আজান হয়, এবং আজান শেষে আমি বলি বক্তব্য দ্রুত শেষ করতে।
প্রথমে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া পরিবারের ২-৩ জন বক্তব্য দেন। এরপর আমি বক্তব্য শুরু করি। যারা আমাকে নিয়মিত দেখেন বা চেনেন তারা জানেন এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমি সাধারণত ১০ মিনিটেরও বেশি সময় বক্তব্য দিয়ে থাকি। কিন্তু সেদিন আমার বক্তব্য ছিল মোটামুটি ৪-৫ মিনিটের মতো। বক্তব্যের এক থেকে দুই মিনিট পর নামাজের ঘোষণা মাইকে দেওয়া হয়। প্রথমে আমি শুনিনি, পরে যখন শুনতে পাই তখন আমার বক্তব্য খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে শেষ করে দেই!
আমার চিন্তা ছিল যদি বক্তব্য নামাজের পর দেই, তবে অন্তত আরও ২০ মিনিট রাস্তা বন্ধ থাকবে এবং উপস্থিত মুসল্লিরা হয়তো সময়মতো নামাজে অংশ নিতে পারবেন না। তখন আমি যা ভেবেছিলাম, তা ছিল জনসাধারণের ভোগান্তি কমানো। বুঝতে পারিনি আমার এই সিদ্ধান্ত ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাইদের কষ্ট দেবে। যদি জানতাম, নিশ্চয়ই এমন করতাম না।
আমার উদ্দেশ্য কখনই খারাপ ছিল না। আমি একজন মুসলিম এবং আমি বিশ্বাস করি ইসলামের ওপরে আর কিছু নেই। ২০১২ সালে আমি হজ পালন করেছি, আল্লাহর ঘর দেখেছি। হয়তো জীবনের সবক্ষেত্রে ইসলামি নিয়ম শতভাগ মেনে চলতে পারিনি, তাই বলে আমি কখনও নামাজকে ছোট করিনি, কখনও ইসলামকে অবমাননা করিনি। আর আমি মানুষ ভুল মানুষেরই হয়।
আজ যারা আমাকে নানা ভাষায় গালি দিচ্ছেন, তাতে আমি কষ্ট পাই না, কিন্তু আমাকে ইসলামবিরোধী হিসেবে তুলে ধরা এটাই আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টদায়ক। রাজনীতি করতে এসে যদি আমাকে ‘ইসলামবিরোধী’ ট্যাগ বহন করতে হয়, তাহলে এমন রাজনীতি আমার জন্য নয়।
এই দেবিদ্বারকে আধুনিক দেবিদ্বার গড়ার স্বপ্ন যাঁরা দেখে থাকেন আমি বিশ্বাস করি, আমার পরিবারের চেয়ে বেশি কেউ ভাবেনি বা করেনি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ আশপাশের কিছু থানা-উপজেলা দেখুন এবং দেবিদ্বারকে দেখুন, আপনারা জানেন দেবিদ্বারের শাসনামল কেমন ছিল, কী কী উন্নয়ন হয়েছিল এই দেবিদ্বারে। সেই ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর ছেলে আমি, ব্যারিস্টার রিজভিউল আহসান মুন্সী। আমার বাবার রক্ত আমার শরীরে। আমার বাবা দেবিদ্বারে দুর্নীতি সহ্য করেননি, খারাপকে আশ্রয় দেননি, টাকার বিনিময়ে কোনো কিছুর সাথে আপস করেননি। তাঁর ছেলে হয়ে আমি জেনে-বুঝে কখনো এমন কাজ করতে পারি না।
আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। এটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল ছিল। আপনারা দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন।