শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

দেবিদ্বারের জুলাই যোদ্ধা আবু বকরের মাথার ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেছে বাকশক্তি

  • আপডেট সময়: সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৯ দেখেছেন :


মো: ইসহাক খান :
দীর্ঘ দিন হাসপাতালে কাটিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি দেবিদ্বারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলার শিকার কিশোর আবু বকর। চিকিৎকরা জানিয়েছেন হামলায় তার মাথার খুলি ও ব্রেইন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার স্মৃতি ও বাকশক্তি ফেরা অনিশ্চিত। গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে দেবিদ্বার উপজেলা সদরের সরকারি কলেজ রোডে ভয়াবহ হামলার শিকার হয় ১৬ বছরের এই শিক্ষার্থী। এক সময়ের প্রাণচঞ্চল আবু বকর বর্তমানে আজ নিজ বাড়িতে বাকহীন, নিথর আর অসহায় জীবন যাপন করছেন। অন্যের সহায়তা ছাড়া বসতে উঠতেও পারেন না। পরিবারের অভিযোগ কেউ কেউ সামান্য আহত হয়েও পেয়েছেন আহতের ক্যাটাগরী ‘এ’, অথচ মারাত্মকভাবে ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আবু বকর আছে আহতদের ‘সি’ ক্যাটাগরীতে। পরিবারের দাবি তাকে সরকারি খরচে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর। তবে অর্থ সংকটে এখন দেশেও তার চিকিৎসাও প্রায় বন্ধের পথে।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিতে গেলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। আহত হন আবু বকরসহ কয়েকজন। তাকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার এবং সর্বশেষ গত বছরের ১৬ আগষ্ট ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একাধিকবার আইসিইউতে রাখা হয় তাকে। মাথার খুলি খুলে ব্রেইনের চিকিৎসায় অবস্থার কিছু উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকরা বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে দেবিদ্বার উপজেলার শাকতলা গ্রামের নিজ বাড়িতেই বিছানায় তার সময় কাটছে।
তার বাবা আবুল খায়ের বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছিল আমার ছেলে। হাতে ছিল না লাঠি কিংবা অস্ত্র। তবুও ওকে কুপিয়ে, পিটিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন ও কিছুই বুঝতে পারে না, নিজের হাতে খেতেও পারে না। আমরা কোথায় যাব, কার কাছে বলব? ঘটনার পর তিনি বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় মামলা করেন। মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রায় ৭০/৭৫ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। মামলাটি বেশিরভাগ আসামি পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আবু বকরের মা বলেন, ‘ওর মুখের দিকে তাকানো যায় না। চুপচাপ বসে থাকে, কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় না, শুধু তাকিয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল করে। খাওয়া, গোসল, টয়লেট সব কিছুতে আমাদের সহায়তা লাগে।’

আহত আবু বকরের তার বড় ভাই আলী মিয়া বলেন, ‘বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পাঁচজনের সংসারে আমিই একমাত্র উপার্জনকারী। সামান্য বেতনে গাড়ি চালাই। আমি নিজেও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমার চিকিৎসায় বাবার সব সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সরকার ও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পেয়েছেন ২লাখ টাকা। এরপর আবু বকরের চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে চলছে। ঢাকার চিকিৎসকরা বলেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাহিরে নেয়ার জন্য। সরকার থেকে এ বিষয়ে কোন আশ্বাসও পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হবার পরও সরকারিভাবে ‘সি’ ক্যাটাগরির আহত দেখানো হয়েছে তাকে, ফলে কোনো উল্লেখযোগ্য অনুদান পাচ্ছি না, ক্যটাগরী পরিবর্তন করতে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করা আছে। এর কোন অগ্রগতির খবরও জানি না।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, আহত আবু বকরের চিকিৎসার খোঁজখবর আমরা নিয়েছি। তার বিষয়টি আমাদের নলেজে রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে যে কোনো সহায়তা এ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ বলেন, হামলায় আহত আবু বকরের চিকিৎসা সনদ অনুসারে তার আহত হওয়ার ক্যাটাগরী পুন: নির্ধারনের বিষয়টি বিধি মোতাবেক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনন্য ক্যাটাগরির সংবাদ
© All rights reserved © Comillakantha.com
Theme Customized By Mahfuz